ওয়েব ডেস্ক ১২ ই অগাস্ট ২০২০:পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যতটা না ভারতের কেন্দ্র শায়িত অঞ্চল জম্মু -কাশ্মীর নিয়ে সরব , ঠিক তার বিপরীতে পুরোপুরি নিরব থাকেন আজাদ কাশ্মীর , বেলুচিস্তান নিয়ে।
পাকিস্তানের এই দুই প্রদেশেই দিন দিন স্বাধীনতা আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। এমনকি এই দুই প্রদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত পাকিস্তানী সেনা ও পুলিশ বাহিনী কতৃক নির্যাতিত হচ্ছেন বলে আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে। অথচ এই নিয়ে পাক সরকার বা ইমরানের খানের কোনো বক্তব্য নেই। অপরদিকে ভারতের জম্মু -কাশ্মীরের ব্যাপারে চীনও পাকিস্তানের সুরে কথা বললেও পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কোনো কথা বলে না চীন।
এছাড়া চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনা সরকার ভয়াবহ নির্যাতন অব্যাহত রাখলেও পাকিস্তান সরকার সে ব্যাপারেও মুখ খুলতে রাজি নয়। অর্থাৎ ভারতের জম্মু - কাশ্মীরের মানবাধিকার রক্ষার কথা বলে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে চীন পাকিস্তান যতটা সরব, বিপরীতে আজাদ কাস্মীর, বেলুচিস্তানের নির্যাতিত নাগরিক ও উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে নিয়ে পুরোপুরি নিরব পাকিস্তান ও চীন।
জানা গেছে, পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের অদিকার রক্ষাকারী হিসেবে নিজের ভাবমূর্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। তবে এজন্য তিনি শুধুমাত্র ভারতের কাশ্মীরের বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি অ্যাডলফ হিটলারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। গণহত্যার দায় চাপিয়েছেন মোদির বিরুদ্ধে। কিন্তু চীনের উইঘুর সহ নিজ দেশে বেলুচিস্তান, আজাদ কাম্মীর, ও সিন্দু প্রদেশে মানবাধিকার রক্ষার ব্যাপারে তিনি বরাবরই রহস্যজনক ভাবে নিরব।
সম্প্রতি ইমরান খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা এবং কাশ্মীরিরা ভারতের অবৈধ আচরণ কখনো মেনে নেব না। তিনি আরও বলেন, কাশ্মীরের জনসাধারণের ওপর ভারতের নিষ্ঠুর আচরণ মেনে নেব না। যদিও উইঘুর সম্প্রদায়ের ব্যাপারে জিজ্ঞসা করা হলে ইমরান খান বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরেন।
এই ব্যাপারে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় কলামিস্ট হুমা ইউসুফ বলেছেন, উইঘুর স¤প্রদায় নিয়ে পাকিস্তানের নীরবতার কারণে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তনের প্রতিবাদের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক মিখাইল কুগেলম্যান বলেন, পাকিস্তান কাশ্মীরি মুসলিম সম্প্রদায় ও ভারতের মুসলিমদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার। কিন্তু উইঘুরদের নিয়ে তারা নীরব।
এদিকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন ভারতের জন্মু কাশ্মীরে মানুষের অধিকার আর স্বাধীনতার জন্য জোরালো কথা বললেও তার নিজের দেশেই দুই প্রদেশে স্বাধীনতার আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। বিশেষ আজাদ কাশ্মীরের জনগণ এবার পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতার দাবি তুলেছে।
সম্প্রতি অঞ্চলটির জন সংযোগ বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেলের (ডিজিপিআর) হ্যাক হওয়া ওয়েবসাইট থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গেছে। হ্যাক হওয়া ওয়েবসাইটে যা লেখা রয়েছে, আজাদ কাশ্মীরের মানুষ পাকিস্তানের থেকে স্বাধীনতা চায়। পাকিস্তানি সেনা ও পুলিশ এখানে চরম অত্যাচার করছে ও সন্ত্রাসবাদীদের মদত দিচ্ছে। গত ৭০ বছর এখানে পাকিস্তান যা করেছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি। আমরা আজাদি চাই।
এ দিকে পাকিস্তানে অধিকৃত কাশ্মীরের নির্বাসিত নেতা সর্দার শওকত আলি কাশ্মীরী গত বছর থেকে বিদেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। তার অভিযোগ, পাকিস্তান সরকার আজাদ কাশ্মীরের মানুষজনকে তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করার সুযোগ দেয়নি। ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা চেয়েছিল। ওই বছর ২২ অক্টোবর কাশ্মীরে হামলা করে পাকিস্তান। তার পর থেকে সেখানে দখলদারিত্ব চলছে। যদিও পাকিস্তানের কেন্দ্র সরকার ও প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এই বিষয়ে সব সময় থাকে পুরোপুরি নিরব ।
শুধু আজাদ কাশ্মীর নয়, পাকিস্তানের আরেক বড় প্রদেশ বেলুচিস্তানের মানুষও পাকিস্তানের কাছ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করছেন। তাদের অভিযোগ পাক সেনাবাহিনী বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর দমননিপিড়ন চালাচ্ছে।
১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হয় এ প্রদেশটি। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ অ লে একটি প্রাদেশিক সরকার রয়েছে। তবে বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কার্যত ভিনদেশি আগ্রাসী বাহিনীর মতো করে দমননীতি জারি রেখেছে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রাদেশিক সরকারের তেমন কোনো অবস্থান নেই। আজাদ কাশ্মীরের মতো সেখানে বেলুচ বংশোদ্ভূত আদি জনগোষ্ঠীর মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীনতার দাবি জানিয়ে আসছে। এমনকি গত বছর ভারতের স্বাধীনতা দিবসে ভারতের সরকার ও জণগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মীরা তাদের স্বাধীনতার জন্য জাতিসংঘ ও ভারতের সহযোগীতা কামনা করেছেন। যদিও ভারত এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। কিন্তু ইমরান খান তার নিজেদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যাপারে কোনো টু শব্দ না করলেও প্রতিনিয়ত ভারতের জস্মু কাশ্মীর নিয়ে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে সরব থাকে। তার সঙ্গে রয়েছে প্রধান মিত্র চীন।
৫ আগষ্ট আবারো ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের মধ্য দিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাতিলের সিদ্ধান্তকে 'অবৈধ' বলে উল্লেখ করে চীন। বেইজিং দাবি করে আসছে, জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে একতরফা যে কোনও সিদ্ধান্ত অবৈধ ও অকার্যকর’। গত বছর বেশ কয়েকটি বিবৃতিতেও ভারতীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে একই অবস্থান জানিয়ে আসছিল পাকিস্তানের মিত্র চীন।
গত ৫ আগষ্ট ছিলো জম্মু-কাশ্মীরের দ্বিখন্ডিত হওয়া ও সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন। ঐদিনই চীন ও পাকিস্তানের যৌথ আক্রমণ মোকাবিলা করতে হয় ভারতকে। ঐদিন পাকিস্তানের হয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলতে চায় চীন । কিন্তু আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের বিরোধীতার কারণে চীনের সেই প্রয়াস ব্যার্থ হয়। চীন এর আগেও দুবার এই চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ, চীন ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যই মনে করে জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ ও দ্বিপক্ষীয় বিষয়। অতএব তা আলোচনার বিষয়বস্তু হতে পারে না। এর আগের দিন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখ ও গুজরাটের কিছু অংশসহ পাকিস্তানের নতুন মানচিত্র প্রকাশ করেন। ইমরানের মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদনও করা হয়। যদিও ভারত ওই মানচিত্রকে ‘হাস্যকর’ বলে বর্ণনা করেন।
এছাড়া ৫ ই আগষ্টই ইমরান খান চলে যান পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরবাদে। সেখানে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে এক ভাষণে তিনি বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত চারটি অনুমানের ওপর নির্ভরশীল ছিল। সেগুলোর প্রতিটিই ব্যর্থ। ইমরানের দাবি ভারতের পক্ষে এটা কৌশলগত বিপর্যয়।
No comments:
Post a comment